ভালো থেকো ইস্কুল বাড়ি..

১৩ বছরের সম্পর্কের অবসান। এখন পুরোটাই স্মৃতি। ছেলেবেলায় কাঁদতে কাঁদতে যে অজানা বাড়িটায় বাবা প্রথম ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিল। সমস্ত ভয় কাটিয়ে সেই বাড়িটাই হয়ে উঠেছিল সবথেকে প্রিয়। এই স্কুলবাড়ি টা হয়তো আর কোনদিন বন্ধু পাতিয়ে দেবে না । স্কুলের উঠোনটা হাতছানি দিয়ে বলবে আর কি দেখা হবে না টিফিন বেলায় , খেলার ক্লাসে কিংবা সরস্বতী পুজোয়। ক্লাসের বেঞ্চগুলোর আজ বড্ড মন খারাপ। হয়তো প্রার্থনা সঙ্গীতের গানটায় থেমে যাবে সুর।

ক্লাসরুম,বেঞ্চ, স্কুলের উঠোন, বন্ধুত্ব, রেষারেষি, ফুটবল, হারানো আঙিনা, হারানো সময় ,স্মৃতির বায়োস্কোপে চোখ রেখে মনে পড়ে যায় স্কুল বাড়িটার কথা। চক ডাস্টার, অঙ্কের ক্লাস, বাংলা ক্লাস ,শিক্ষক শিক্ষিকা, রবীন্দ্রজয়ন্তী  শিক্ষক দিবস, রিহার্সাল , বড়ো খবর, মনের দৃষ্টিকোণ, সং বর্তিকা র জন্য আমাদের একসাথে কাজ করা ,ক্রীড়ানুষ্ঠান ,এক্সকার্শন আরো কত কি!

হাজার স্মৃতির ভিড়ে চেনা মুখ গুলো হারিয়ে যাবে। কিছু পরিচিত শিক্ষক শিক্ষিকা, বন্ধুত্ব, পাগলামি সব শেষ। স্কুলের ঘরগুলোতে থাকবে না আর কোনো অধিকার , স্কুল ইউনিফর্ম টা পড়ে থাকবে একলা ।

হয়তো আর কোনোদিন সুতপা ম্যাম বা সম্পূর্ণা ম্যামের কাছে খেলার ক্লাসের জন্য বায়না ধরবো না। হয়তো আর কোনোদিন শুনতে পারবো না শুভজিৎ স্যারের "আফগানি আরশোলা","ছাল ছাড়ানো রাম ছাগল"; প্রবীর স্যারের "মর্কট" ও "গোবিন্দ"; অর্ঘ্য স্যারের "ছকই জীবন , জীবনই ছক" বলা।

জলছবি, রংমশাল, স্কুল ছুটির হজমিরা আজ থেকে রূপকথার গল্প বলবে ফ্ল্যাশব্যাকে। টিফিন বেলায় একটুকরো বিস্কুট ভাগ করে বন্ধু হয়ে ওঠা সম্পর্কগুলোর দিশা পাবে নতুন মোড়ে । পড়ন্ত বিকেলে কেউ এসে বলবে না "বন্ধু চল"।

আসলে কিছু দুঃখ থাকে যেগুলোকে না পাওয়ার মত দুঃখ আর হয় না। তেমন কিছু কান্নার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে আনন্দ। মন খারাপের ভিতর লুকিয়ে থাকে মন ভালোর ঠিকানা। সাদা হলুদ রাঙা এই বাড়িটা আমাদের পৌঁছে দেয়, সেই মন ভালো আর মন খারাপের ঠিকানায়।

শুভজিৎ স্যার বলতেন "বাড়ি ইট-কাঠ-পাথরের হয় না, হয় সম্পর্কের"। এটাই সত্যি!

- সৌম্যদীপ আদক
শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম ইনস্টিটিউট (মাধ্যমিক শাখা)

Comments

  1. আজ আমাদের বাড়ির জন্মদিন... ❤️

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

হুদুর দুর্গা

শীতের বিকেল....